কুড়িগ্রামে ৩৫ হাজার মানুষ পানি ও খাবার সংকটে

সীমান্ত নদী জিনজিরাম, কালুর ও ধরনী উপচে পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

উপজেলার ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪৯টি গ্রামের ৩৫ হাজার পানিবন্দি মানুষ রয়েছেন বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে। ঘরে-বাইরে সবখানে বন্যার পানি।

রান্না করতে না পারায় অনেকে শুকনো খাবার খেয়ে আছেন। অনেকে খাটের ওপর চুলা তুলে কোনো রকমে রান্না করছেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজন রান্না খাবার নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও এ পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ পানিবন্দি মানুষের।

বকবান্ধা গ্রামের সাফিয়া বেওয়া (৬৩) বলেন, 'নলকূপ বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় পান করার বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না। রান্না ঘরে পানি থাকায় রান্না করতে পারছি না। আত্মীয়-স্বজনরা রান্না করা খাবার ও পানি দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি আছি। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পাইনি।

লালকুড়া গ্রামের কৃষক মোবারক শেখ (৬৫) বলেন, 'ঘরে-বাইরে চারদিকে পানি আর পানি। গবাদি পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে আছি। ঘাসের জমি পানির নিচে। গো-খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছি না। বন্যা আরও কয়েক দিন থাকলে কম দামে গবাদি পশু বিক্রি করতে বাধ্য হবো।'

কলাগাছের ভেলায় চড়ে দূর থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আলগারচর গ্রামের কৃষক শরবত আলী (৬০) বলেন, 'শুকাতে দেওয়া খড়গুলো বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে ৫টি গরু খাওয়ানোর মতো খড় নেই। বাজার থেকে বেশি দামে খড় কিনতে হচ্ছে। নলকূপগুলো পানির নিচে। বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট।

'চিড়া, মুড়ি, গুড়, পাউরুটি খেয়ে আছি। পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় চরম ক্ষতি হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার পানিতে ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল ও ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে ৩৭টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ আছে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।

বন্যাদুর্গত গ্রামগুলো হলো: যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর, কাশিয়াবাড়ী, লালকুড়া, বিক্রিবিল, চর লাঠিয়ালডাঙ্গা, বালিয়ামারী, শ্রীফলগাতি, খেওয়ারচর, বকবান্দা, আলগারচর, পাহাড়তলী, যাদুরচর পূর্বপাড়া, তিনঘড়িপাড়া ও বকবান্ধা।

এ ছাড়াও, রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইরগ্রাম, ঝাউবাড়ি, দুবলাবাড়ি, পাটাধোয়াপাড়া, রতনপুর, বামনেরচর, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, নতুন চুলিয়ারচর, উত্তর বারবান্দা, মির্জাপাড়া, ইজলামারী, ফুলবাড়ি, চুলিয়ারচর, চরবারবান্ধা, ভুন্দুরচর, নয়ারচর, মাদারটিলা, পশ্চিম মাদারটিলা, গোয়ালগ্রাম, চান্দারচর, খাটিয়ামারী, পূর্বইজলামারী, কড়াইকান্দি ও ঠনঠনিপাড়া।

আরও আছে—শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া, কলমেরচর, বেহুলারচর, চরেরগ্রাম, চরবোয়ালমারী, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর, কাউয়ারচর, ডিগ্রীরচর, পূর্বকাউয়ারচর ও বাঘেরহাট।

তিনঘড়িপাড়া গ্রামের মাছের খামারি তরিকুল ইসলাম (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাহাড়ি ঢলে ৪ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ১০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আগাম বন্যার প্রস্তুতি ছিল না।'

তার মতো আরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আজিজুর রহমান বলেন, 'পানিবন্দি মানুষের জন্য ৩ লাখ টাকার শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। সেগুলো আজ বিতরণ করা হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের তালিকা পাওয়া গেছে এবং শিগগিরই তাদেরকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে বলে। সূত্রঃ ডেইলি স্টার। সম্পাদনা র/ভূঁ। ম ১৪০৬/০২

Related Articles