আমলাতন্ত্র থেকে রক্ষার দাবি জানান পেশাজীবীরা

ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আমলাতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করেছেন পেশাজীবী নেতারা। নিষ্পেষণ ও শোষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে আমলাতন্ত্র থেকে তাদের রক্ষার দাবি জানান পেশাজীবীরা। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে আদর্শে বিশ্বাসী নয় এমন ব্যক্তিদেরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।আ

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে পেশাজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মতবিনিময় সভায় নেতারা এ সমালোচনা করেন। 

সভায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক বলেন, আমার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন জামায়াত বিএনপির অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যদি তাই হয়, আর শেখ হাসিনার অনুসারীরা অপসারিত হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো, বিশেষ করে সিভিল সার্জন, পরিচালক এবং অন্যান্য পদে প্রশাসন ক্যাডারে আশীর্বাদপুষ্ট কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, যারা আমাদের চেতনাকে লালন করে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যোগ্যতা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আনুগত্য হবে সরকারি কর্মক্ষেত্রের বিবেচ্য বিষয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি বাদ দিয়ে যেভাবে বিরোধীদের পদায়ন করা হচ্ছে, তাতে আমি শঙ্কিত। আগামী নির্বাচনে আমাদের সরিয়ে কোনো একটি কুচক্রী মহল ফায়দা হাসিল করতে চায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশাজীবী প্রতিনিধিদের মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। 

এহতেশামুল হক বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো জাতীয় সংসদে পেশাজীবীদের অংশীদারিত্ব আজকে সময়ের দাবি। আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে এর দাবি জানাচ্ছি। 

আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী নূরুল হুদা বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চেয়ে চারটা চিঠি দিয়েছি। করোনার মধ্যে আমলারাতো ঠিকই দেখা করেছেন। আমরা কোভিড টেস্ট করে দেখা করতে পারতাম। কিন্তু একটি অদৃশ্য দেয়াল সেটা বন্ধ করে রেখেছে। পেশাজীবীরা হচ্ছেন প্রথম কাতারের সৈনিক। এই পেশাজীবীদের দূরে সরিয়ে রাখলে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বেসরকারি শিক্ষকরা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালও হতে পারবেন না। সরকারি কলেজ থেকে ডেপুটেশনে দায়িত্ব নিয়ে এসে বসবেন। গত তিন বছরে শিক্ষামন্ত্রী একদিনের জন্যও আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি, বসেননি। তিনি সমস্ত শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে দিলেন। আমরা জানিও না আমাদের বাদ দিয়ে কী কারিকুলাম তিনি করলেন। আজ আমাদের সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু বিড়ালের মতো আমরা, আমাদের গলায় জোর নাই। আজ আমলাতন্ত্র, যারা মন্ত্রণালয়ে আছেন তারা আমাদের বিড়ালের মতো মনে করেন।

আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, এমন সকল লোকদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা মেডিকেলের একটা বইয়ের নামও উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনারা জানে একটা বিষয়ের উন্নতি করতে যা দরকার তাদের সেই ক্ষমতা নেই। 

পেশাজীবীদের ক্ষোভের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা সময় আমরা পার করছি। সবখানে অস্থিরতা। ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সবাই বিষয়টা মর্মে মর্মে বুঝছে। আমরাও উপলব্ধি করছি। আমাদের অর্থনৈতিক জীবনেও এই যুদ্ধ প্রভাবিত করতে পারে, সেটা আঁচ করতে পেরেছি। আমাদের ভাগ্য ভালো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো একজন ডায়নামিক নেত্রী পেয়েছি। তিনি জেগে আছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে।

সব কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের অফিসে এখন প্রচুর ভিড়। আর সেই ভিড় আওয়ামী লীগ নেতাদের নয়, সেখানে যারা যায় তাদের বেশির ভাগই চাকরি প্রার্থী অথবা ট্রান্সফার নিয়ে তদবির করতে আসে। দলীয় লোক কম আসে। শেখ হাসিনা আপনাদের দূরে সরিয়ে দেননি।  

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ডা. কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি প্রফেসর মাকসুদ কামাল, আইইবির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শীবলু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, স্বাচিপের সভাপতি ডা. ইকবার আরসালান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল নূর দুলাল প্রমুখ। সূএঃ সমকাল। সম্পাদনা না/রি। স ০৬০৩/০৬

Related Articles