রাজধানীতে বেড়েই চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা

প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে রাজধানীতে। মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামটর, হাইকোর্ট এলাকাসহ বিভিন্ন রাস্তায় ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। ধরা পড়লেও অল্প সময়ে ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাহিদ। প্রাইভেট পড়া শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের খিলজি রোড দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তিন ছিনতাইকারি তার গলায় ছুরি ধরে মোবাইল-মানিব্যগসহ সব নিয়ে যায়। 

শিক্ষার্থী নাহিদ জানান, জীবনের যদি মায়া থাকে তাহলে সব দিয়ে দাও। আমি বললাম, ফোনটা দেওয়া যাবে না, এর পরিবর্তে টাকা চায় তারা। কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিল তাই ওরা ফোনটা নিয়ে যায়। ফোনের পাসওয়ার্ডটা নিয়ে নেয়। পাসওয়ার্ড ভুল দেওয়ায় ওরা ছুড়ি দিয়ে ভয় দেখায়।

আশপাশের মানুষ কেউ এগিয়ে আসেনি। থানায় গিয়ে দেখে এমনই ঘটনার শিকার আরও অনেকে এসেছেন ডায়েরি করতে।  

নাহিদ আরও বলেন, “ছিনতাই আর হারিয়ে যাওয়া একই ঘটনা। কিন্তু তারা ছিনতাই না দেখিয়ে হারিয়ে যাওয়াটা দেখিয়েছে।”

শুধু নাহিদ নয়, মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোড়, বাবর রোড, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যানসহ প্রতিটি রাস্তায় দিনে-রাতে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পথচারিরা।  

ছিনতাইয়ের শিকার পথচারিরা জানান, ফোন ছিনতাইটা থামাতে চেষ্টা করছিলাম, পরে সে ছুড়ি বের করে ভয় দেখিয়ে ব্যাগটাও টেনে নিয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে ২০২২ সালে এসব ঘটনায় হারানো সাধারণ ডায়েরী হয়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। একই সঙ্গে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরী হয়েছে প্রায় ৬ হাজার। এছাড়া অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৪৯টি। যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোনো মামলার সঠিক চিত্রও পাওয়া যায় না। প্রতিদিন যতগুলো ঘটনা ঘটে, তার সামান্যই প্রকাশ পায় এসব সাধারণ ডায়েরী থেকে।  

ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, অন্তত অর্ধশত অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। এরপর কোর্টে চালানও দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব আসমিদের মধ্যে অনেকেই খুব দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। 

রেজাউল ইসলাম হৃদয় নামের এক আসামি অন্তত ১৫-১৬ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে গিয়েছে, কিন্তু আবার বের হয়ে ফিরেছে পুরোনো পেশায়।

রাজধানীতে অপরাধ বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন ডিএমপির মুখপাত্র। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। 

ডিমিপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “পেশাদার অপরাধীদের বাইরে এখন আমরা যে ট্রেনটা দেখছি সেটা হচ্ছে, ঢাকা শহরে অসংখ্য মাদকসেবী আছে। যারা রাস্তায় ঘুমায়, তাদের ঘর-বাড়ির কোনো ঠিকানা নাই, পরিবারের সাথে তাদের যোগাযোগ নেই। যখন তার পেটে ক্ষুধা লাগে অথবা মাদকের নেশা যখন তার চরমে ওঠে তখন তার পাশ দিয়ে কোনো ব্যক্তি গেলে তার কাছ থেকে মোবাইল-মানিব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে নেয় “

ছিনতাই বন্ধে বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার কথাও জানান তিনি। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের সহযোগীতার আহবান জানান এই কর্মকর্তা। 

উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “একটা জায়গায় যদি আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটে বা ছিনতাই ঘটে বা মারামারি ঘটে  বা ডাকাতি- যেটাই ঘটুক এর পরপরই যদি আমাদের ক্যামেরা কাভারেজ না দিতে পারে তাহলে আশপাশের বাসা-বাড়ির ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করি।” সূত্রঃ একুশেটিভি। সম্পাদনা ম\হ। না ০১২৬\০১

Related Articles