আজ সংসদ বসছে, চোখ থাকবে জাপার দিকে

আজ রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টায় চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে গত ১২ অক্টোবর এই অধিবেশন ডেকেছেন। ইতিমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার সভাপতিত্বেই আজ অধিবেশন শুরু হবে। তবে নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে আজ এবং এই অধিবেশনের আরো কয়েক দিন সবার চোখ থাকবে কার্যত প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) দিকে।

অধিবেশন শুরুর আগে আজ বেলা ৩টায় সংসদ ভবনে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। কমিটির সভাপতি ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে কমিটির সদস্য, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনাও অংশ নেবেন। বৈঠকে শুরু হতে যাওয়া অধিবেশনের মেয়াদসহ কার্যসূচি নির্ধারণ করা হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিবেশনটি চলতে পারে।

অধিবেশনের আজকের প্রথম বৈঠকে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব উত্থাপন এবং এর ওপর আলোচনা ও প্রস্তাব গ্রহণের পরেই মুলতবি করবেন স্পিকার। প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য শেখ এ্যানি রহমানের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে আজকের অধিবেশন মুলতবি করা হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে তার জন্য সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।

করোনার প্রকোপ কমলেও এবারের অধিবেশনও চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকা সব সংসদ সদস্যই অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘করোনা টেস্টের পর যেসব এমপির রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, তারা প্রত্যেকেই অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো পালা থাকছে না।’

এদিকে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ডাকা ২৬ নভেম্বরের জাপার কাউন্সিল এবং ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ প্রশ্নে দলটিতে সৃষ্ট বিভক্তির কারণে এবারের অধিবেশনের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি রাখছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফিরে রওশনের আজ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তার ফিরতে আরো কয়েক দিন লাগবে।

রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বহাল থাকবেন, নাকি জি এম কাদের নতুন করে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন—এই প্রশ্নের ফয়সালা দেখতে এই অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে আছেন জাপার নেতা-কর্মীরা। ‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না’—এমন কারণ দেখিয়ে তার পরিবর্তে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে গত ১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় দলটির পার্লামেন্টারি পার্টি। ঐ দিন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাপার পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে দলটির ২৬ জন এমপির মধ্যে ২৩ জন জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন করে গৃহীত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।

স্পিকারকে দেওয়া জাপার ঐ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। কিন্তু আগের অবস্থান থেকে সরে রওশনের পক্ষ নেওয়ায় এবং স্পিকারকে দেওয়া চিঠির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। এরপর স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে রাঙ্গা সেই চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এরপর শুক্রবার দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দিয়ে রাঙ্গাকে দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল নিজের ফেসবুকে রাঙ্গা লিখেছেন, জি এম কাদের সম্পর্কে তিনি কোনো কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেননি। যারা তার নামে এসব প্রচার করে বিভক্তি সৃষ্টি করছেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বিরোধীদলীয় নেতা প্রশ্নে স্পিকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে জাপা। তবে চিঠির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি স্পিকার। এ ব্যাপারে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেছেন, ‘চিঠি নিয়ে অনেক জটিলতা আছে। চিঠিটা আমি পরীক্ষা করছি। কারণ, আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি কখনো। তাই সংশ্লিষ্ট আইন ও কার্যপ্রণালি বিধি পরীক্ষা করে দেখছি। এগুলো দেখা শেষ হলে আমি অবশ্যই রিপ্লাই দেব।’

প্রসঙ্গত, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। সংসদের কর্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট)-তে বলা হয়েছে, ‘“বিরোধীদলীয় নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।’

এদিকে, অধিবেশন শুরুর আগে আজ দুপুর ১টায় সংসদ ভবনে জাপার পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাপার চেয়ারম্যান ও পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান জি এম কাদের। বৈঠকের বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘আজকের বৈঠকের সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আবার পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক ডাকা হবে। সেই বৈঠকে নতুন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মনোনয়নসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’সূত্রঃ ইত্তেফাক। সম্পাদনা ম\হ। বৈ ১০৩০\০৩ 

 

Related Articles